Wednesday, June 12, 2024

আমেরিকান গৃহযুদ্ধ (American Civil War)

 আমেরিকান গৃহযুদ্ধ (American Civil War) ১৮৬১ থেকে ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধের মূল কারণ ছিল দাসপ্রথা নিয়ে উত্তরের ইউনিয়ন (Union) এবং দক্ষিণের কনফেডারেট রাষ্ট্রসমূহের (Confederate States of America) মধ্যে মতবিরোধ। এই যুদ্ধে প্রায় ৬ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়, যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত।


যুদ্ধের পটভূমি

দাসপ্রথা ও অর্থনৈতিক পার্থক্য

উত্তরের রাজ্যগুলো শিল্পায়িত ও বাণিজ্যিক অর্থনীতির দিকে ঝুঁকে পড়ছিল, যেখানে দক্ষিণের রাজ্যগুলো মূলত কৃষিভিত্তিক ছিল এবং তাদের অর্থনীতি দাসশ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল। দক্ষিণাঞ্চলীয়রা দাসপ্রথাকে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনের অপরিহার্য অংশ মনে করত, অন্যদিকে উত্তরের মানুষ দাসপ্রথার বিরোধী ছিল এবং এটিকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখত।

রাজনৈতিক উত্তেজনা

১৮৬০ সালে আব্রাহাম লিংকন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দক্ষিণের রাজ্যগুলি আশঙ্কা করতে শুরু করে যে লিংকন এবং তার রিপাবলিকান পার্টি দাসপ্রথার সম্প্রসারণ বন্ধ করে দেবে। এর ফলে, ১৮৬০-১৮৬১ সালে এগারোটি দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কনফেডারেট রাষ্ট্রসমূহ গঠন করে।

প্রধান যুদ্ধ ও ঘটনাবলী

যুদ্ধের সূচনা

১৮৬১ সালের এপ্রিলে দক্ষিণ ক্যারোলিনার ফোর্ট সাম্টারে কনফেডারেট বাহিনী আক্রমণ করে, যা আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সূচনা করে।

উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ

  • বুল রান (Bull Run): ১৮৬১ সালের জুলাই মাসে ভার্জিনিয়ায় প্রথম বড় যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কনফেডারেট বাহিনী এই যুদ্ধে বিজয়ী হয়।
  • শিলোহ (Shiloh): ১৮৬২ সালের এপ্রিলে টেনেসিতে সংঘটিত হয়, যেখানে উভয় পক্ষের প্রচুর হতাহতের ঘটনা ঘটে।
  • গেটিসবার্গ (Gettysburg): ১৮৬৩ সালের জুলাই মাসে পেনসিলভানিয়ায় সংঘটিত হয়, যা যুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হিসেবে পরিচিত এবং ইউনিয়নের বিজয় নিশ্চিত করে।
  • ভিক্সবার্গ (Vicksburg): ১৮৬৩ সালের জুলাই মাসে মিসিসিপিতে ইউনিয়নের বিজয় ঘটে, যা মিসিসিপি নদীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।

গেটিসবার্গ ভাষণ

১৮৬৩ সালের নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট লিংকন গেটিসবার্গ যুদ্ধক্ষেত্রে একটি স্মরণীয় ভাষণ দেন। তিনি বলেন, "চারটি বছর ও সাত বছর আগে আমাদের পিতারা এই মহাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি নতুন জাতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা সকল মানুষকে সমান অধিকারের ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।"

যুদ্ধের সমাপ্তি ও পরিণতি

১৮৬৫ সালের এপ্রিলে ভার্জিনিয়ার অ্যাপোম্যাটক্স কোর্ট হাউসে কনফেডারেট জেনারেল রবার্ট ই. লি ইউনিয়ন জেনারেল উলিসিস এস. গ্রান্টের কাছে আত্মসমর্পণ করেন, যা যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি নির্দেশ করে।

দাসপ্রথার অবসান

যুদ্ধের পর সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (Thirteenth Amendment) গৃহীত হয়, যা দাসত্বকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করে। এছাড়াও, সংবিধানের চতুর্দশ (Fourteenth Amendment) ও পঞ্চদশ (Fifteenth Amendment) সংশোধনী দ্বারা সাবেক দাসদের নাগরিক অধিকার ও ভোটাধিকার প্রদান করা হয়।

পুনর্গঠন যুগ

যুদ্ধের পরের বছরগুলোতে পুনর্গঠন যুগ (Reconstruction Era) শুরু হয়, যেখানে দক্ষিণের রাজ্যগুলোকে পুনরায় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং সাবেক দাসদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।

যুদ্ধের প্রভাব

আমেরিকান গৃহযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি দেশটির সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামোতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। দাসপ্রথার অবসান এবং নাগরিক অধিকারের প্রসার যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করেছে। তাছাড়া, এই যুদ্ধ জাতীয় সংহতি ও একতার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করেছে।

ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের ঘটনা ও পরিণতি আজও ইতিহাসবিদদের মধ্যে গভীর আলোচনার বিষয়। এই যুদ্ধের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের পরিবর্তন এবং প্রগতির পথ তৈরি হয়েছে। দাসপ্রথার অবসান এবং সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই এখনও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় চেতনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আমেরিকান গৃহযুদ্ধের ইতিহাস আমাদেরকে মানবাধিকার, ন্যায়বিচার এবং জাতীয় সংহতির মূল্য উপলব্ধি করায়। এটি শুধুমাত্র একটি সামরিক সংঘাত নয়, বরং একটি নৈতিক ও সামাজিক বিপ্লব যা দেশের ভবিষ্যত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

বুল রান যুদ্ধ (Battle of Bull Run), যা প্রথম ম্যানাসাস যুদ্ধ (First Battle of Manassas) নামেও পরিচিত, আমেরিকান গৃহযুদ্ধের প্রথম প্রধান যুদ্ধ। এই যুদ্ধটি ১৮৬১ সালের ২১ জুলাই ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের ম্যানাসাস শহরের কাছে সংঘটিত হয়েছিল।

যুদ্ধের পটভূমি

যুদ্ধের পূর্ববর্তী পরিস্থিতি

১৮৬১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, উভয় পক্ষেরই মনে হয়েছিল যে যুদ্ধ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাবে। উত্তরের ইউনিয়ন বাহিনী ও দক্ষিণের কনফেডারেট বাহিনী দ্রুত একটি গুরুত্বপূর্ণ বিজয় অর্জনের জন্য মুখিয়ে ছিল। প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বাহিনী ও কনফেডারেট প্রেসিডেন্ট জেফারসন ডেভিসের নেতৃত্বে কনফেডারেট বাহিনী তাদের নিজ নিজ লক্ষ্য পূরণে সচেষ্ট ছিল।

যুদ্ধের প্রধান ঘটনাবলী

যুদ্ধের শুরু

১৮৬১ সালের ২১ জুলাই, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরভিন ম্যাকডাওয়েলের (Irvin McDowell) নেতৃত্বে ইউনিয়ন বাহিনী ম্যানাসাসের কাছে কনফেডারেট বাহিনীর উপর আক্রমণ চালায়। ইউনিয়ন বাহিনীর পরিকল্পনা ছিল কনফেডারেট বাহিনীকে পরাস্ত করে রিচমন্ডের দিকে অগ্রসর হওয়া।

কনফেডারেট বাহিনীর প্রতিরোধ

কনফেডারেট জেনারেল জোসেফ ই. জনস্টন (Joseph E. Johnston) এবং জেনারেল পি. জি. টি. বোরেগার্ড (P. G. T. Beauregard) তাদের বাহিনীকে সংগঠিত করে ইউনিয়ন বাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করেন। যুদ্ধের প্রথমদিকে ইউনিয়ন বাহিনী কিছুটা অগ্রসর হলেও কনফেডারেট বাহিনী তাদের শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

স্টোনওয়াল জ্যাকসনের ভূমিকা

জেনারেল টমাস জে. "স্টোনওয়াল" জ্যাকসন (Thomas J. "Stonewall" Jackson) কনফেডারেট বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ পরিচালনা করেন। তার নেতৃত্বে কনফেডারেট বাহিনী শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং ইউনিয়ন বাহিনীকে পিছু হটতে বাধ্য করে। জ্যাকসনের দৃঢ়তা ও সাহসের কারণে তার সৈন্যরা তাকে "স্টোনওয়াল" (প্রাচীর) নামে ডাকতে শুরু করে।

যুদ্ধের সমাপ্তি

দিনের শেষভাগে, কনফেডারেট বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে ইউনিয়ন বাহিনী ভেঙে পড়ে এবং বিশৃঙ্খলভাবে পিছু হটে। এই পরাজয় ইউনিয়ন বাহিনীর জন্য একটি বড় আঘাত ছিল এবং যুদ্ধের দ্রুত সমাপ্তির আশা ভঙ্গ হয়।

যুদ্ধের পরিণতি ও গুরুত্ব

কনফেডারেট বিজয়

বুল রান যুদ্ধে কনফেডারেট বাহিনীর বিজয় দক্ষিণাঞ্চলের মনোবল বৃদ্ধি করে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। তারা প্রমাণ করে যে, তারা ইউনিয়ন বাহিনীর বিরুদ্ধে সফলভাবে প্রতিরোধ করতে সক্ষম।

ইউনিয়ন বাহিনীর পুনর্গঠন

এই পরাজয়ের ফলে ইউনিয়ন বাহিনী তাদের কৌশল ও নেতৃত্ব পুনর্বিবেচনা করে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইরভিন ম্যাকডাওয়েলকে সরিয়ে মেজর জেনারেল জর্জ বি. ম্যাকক্লেলানকে (George B. McClellan) নিয়োগ করা হয়, যিনি পোটোম্যাক আর্মি (Army of the Potomac) পুনর্গঠন ও প্রশিক্ষণ দেন।

যুদ্ধের দীর্ঘস্থায়িত্বের ধারণা

বুল রান যুদ্ধ উভয় পক্ষকেই বুঝতে বাধ্য করে যে, গৃহযুদ্ধ দ্রুত শেষ হবে না বরং দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী হবে। এই যুদ্ধের অভিজ্ঞতা উভয় পক্ষেরই প্রস্তুতি ও কৌশলগত পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।

ঐতিহাসিক মূল্যায়ন

বুল রান যুদ্ধ আমেরিকান গৃহযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি যুদ্ধের প্রাথমিক ধাপগুলোকে চিহ্নিত করে এবং উভয় পক্ষের কৌশলগত ও সামরিক পরিবর্তনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে। এই যুদ্ধের ফলাফল যুদ্ধের ভবিষ্যত কৌশল ও পরিকল্পনা গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শিলোহ যুদ্ধ (Battle of Shiloh), যা পিটসবার্গ ল্যান্ডিং যুদ্ধ (Battle of Pittsburg Landing) নামেও পরিচিত, আমেরিকান গৃহযুদ্ধের অন্যতম প্রধান ও রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এই যুদ্ধটি ১৮৬২ সালের ৬-৭ এপ্রিল টেনেসি অঙ্গরাজ্যের শিলোহ গ্রামের কাছে সংঘটিত হয়েছিল।

যুদ্ধের পটভূমি

পরিস্থিতি

১৮৬২ সালের শুরুর দিকে, পশ্চিমা থিয়েটারে ইউনিয়ন বাহিনী বেশ কিছু সাফল্য অর্জন করেছিল। টেনেসির গুরুত্বপূর্ণ ফোর্ট হেনরি এবং ফোর্ট ডোনেলসন দখল করে ইউনিয়ন বাহিনী দক্ষিণের গভীরে প্রবেশ করছিল। মেজর জেনারেল উলিসিস এস. গ্রান্টের (Ulysses S. Grant) নেতৃত্বে ইউনিয়ন বাহিনী টেনেসি নদী বরাবর অগ্রসর হচ্ছিল।

যুদ্ধের প্রধান ঘটনাবলী

প্রথম দিন: ৬ এপ্রিল ১৮৬২

কনফেডারেট বাহিনী, জেনারেল আলবার্ট সিডনি জনস্টনের (Albert Sidney Johnston) নেতৃত্বে, ইউনিয়ন বাহিনীকে আশ্চর্য আক্রমণ করে। ভোরে, তারা শিলোহ গ্রামের কাছে ইউনিয়ন শিবিরে আক্রমণ চালায়। এই আকস্মিক আক্রমণে ইউনিয়ন বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এবং দ্রুত পিছু হটে।

"হর্নেটস' নেস্ট"

ইউনিয়ন বাহিনী কিছু প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে, বিশেষ করে "হর্নেটস' নেস্ট" নামে পরিচিত একটি এলাকায়। এখানে ইউনিয়ন বাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলে, কিন্তু দিনের শেষে কনফেডারেট বাহিনী এই প্রতিরোধ ভেঙে ফেলে।

দ্বিতীয় দিন: ৭ এপ্রিল ১৮৬২

প্রথম দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর, ইউনিয়ন বাহিনী জেনারেল ডন কার্লোস বুয়েলের (Don Carlos Buell) নেতৃত্বে পুনরায় সংগঠিত হয়। বুয়েলের বাহিনী শিলোহতে এসে পৌঁছায় এবং গ্রান্টের বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। ৭ এপ্রিল ভোরে, ইউনিয়ন বাহিনী পাল্টা আক্রমণ শুরু করে। সারাদিনের প্রচণ্ড যুদ্ধের পর, কনফেডারেট বাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয় এবং ইউনিয়ন বাহিনী শিলোহ যুদ্ধক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করে।

যুদ্ধের পরিণতি ও গুরুত্ব

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ

শিলোহ যুদ্ধ ছিল আমেরিকান গৃহযুদ্ধের অন্যতম রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। দুই দিনে প্রায় ২৩,০০০ সৈন্য হতাহত হয়, যা তখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক হতাহতের যুদ্ধ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।


কনফেডারেট জেনারেল আলবার্ট সিডনি জনস্টনের মৃত্যু

যুদ্ধে কনফেডারেট বাহিনীর প্রধান জেনারেল আলবার্ট সিডনি জনস্টন নিহত হন। তার মৃত্যু কনফেডারেট বাহিনীর মনোবল ভেঙে দেয় এবং নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি করে।

যুদ্ধের প্রভাব

শিলোহ যুদ্ধ উভয় পক্ষকেই বুঝিয়ে দেয় যে গৃহযুদ্ধ দীর্ঘ ও রক্তক্ষয়ী হবে। এই যুদ্ধের ফলে উভয় পক্ষই আরও প্রস্তুত ও সংগঠিত হতে বাধ্য হয়। ইউনিয়ন বাহিনীর জন্য, এটি পশ্চিমা থিয়েটারে তাদের অগ্রগতি নিশ্চিত করে এবং টেনেসি নদীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে।

পুনর্গঠন ও কৌশলগত পরিবর্তন

যুদ্ধের পর, উভয় পক্ষই তাদের কৌশল ও সংগঠন পুনর্বিবেচনা করে। ইউনিয়ন বাহিনী আরও সংগঠিত হয় এবং তাদের সামরিক নেতৃত্ব শক্তিশালী করে। কনফেডারেট বাহিনীও তাদের নেতৃত্ব পুনর্গঠন করে এবং নতুন কৌশল গ্রহণ করে।

ঐতিহাসিক মূল্যায়ন

শিলোহ যুদ্ধ আমেরিকান গৃহযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি যুদ্ধের ধারাবাহিকতা ও দীর্ঘায়ু নির্দেশ করে এবং উভয় পক্ষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা প্রদান করে। এই যুদ্ধের মাধ্যমে উভয় পক্ষই বুঝতে পারে যে, এই গৃহযুদ্ধ একটি দীর্ঘ ও কঠিন সংগ্রাম হবে এবং এর জন্য তাদের আরও প্রস্তুতি ও সংগঠন প্রয়োজন।

গেটিসবার্গ যুদ্ধ (Battle of Gettysburg) আমেরিকান গৃহযুদ্ধের একটি প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ সংঘর্ষ, যা ১৮৬৩ সালের ১-৩ জুলাই পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের গেটিসবার্গ শহরে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধটি গৃহযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি যুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষগুলোর একটি।

যুদ্ধের পটভূমি

পরিস্থিতি

১৮৬৩ সালের গ্রীষ্মে কনফেডারেট জেনারেল রবার্ট ই. লি'র (Robert E. Lee) নেতৃত্বে উত্তর ভার্জিনিয়া আর্মি দ্বিতীয়বারের মতো উত্তরাঞ্চলে আক্রমণ চালায়। লি'র লক্ষ্য ছিল ইউনিয়ন বাহিনীকে পরাস্ত করা এবং উত্তরাঞ্চলের মনোবল ভেঙে দেওয়া। তার বিশ্বাস ছিল যে, উত্তরাঞ্চলে একটি বড় বিজয় দক্ষিণের স্বাধীনতার স্বীকৃতি আনতে পারে।

যুদ্ধের প্রধান ঘটনাবলী

প্রথম দিন: ১ জুলাই ১৮৬৩

গেটিসবার্গ যুদ্ধের প্রথম দিন কনফেডারেট বাহিনী গেটিসবার্গের উত্তর-পশ্চিমে ইউনিয়ন বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ইউনিয়ন বাহিনী কিছুটা পিছু হটে গেটিসবার্গের দক্ষিণে উঁচু ভূমি দখল করে, যা তাদের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

দ্বিতীয় দিন: ২ জুলাই ১৮৬৩

দ্বিতীয় দিনে, কনফেডারেট বাহিনী ইউনিয়ন বাহিনীর ফ্ল্যাঙ্ক আক্রমণের চেষ্টা করে। উল্লেখযোগ্য সংঘর্ষের মধ্যে ছিল "লিটল রাউন্ড টপ" এবং "ডেভিলস ডেন"। ইউনিয়ন বাহিনী শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে কনফেডারেট বাহিনীর আক্রমণ ব্যর্থ করে দেয়।

তৃতীয় দিন: ৩ জুলাই ১৮৬৩

তৃতীয় দিনে, জেনারেল লি "পিকেটস চার্জ" নামে একটি বড় আক্রমণ পরিচালনা করেন। এই আক্রমণে কনফেডারেট বাহিনী ইউনিয়ন লাইনের কেন্দ্রে আক্রমণ চালায়। কিন্তু ইউনিয়ন বাহিনীর শক্তিশালী প্রতিরোধের কারণে কনফেডারেট বাহিনীর আক্রমণ ব্যর্থ হয় এবং তাদের বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয়।

যুদ্ধের পরিণতি ও গুরুত্ব

ইউনিয়ন বাহিনীর বিজয়

গেটিসবার্গ যুদ্ধে ইউনিয়ন বাহিনীর বিজয় ঘটে এবং কনফেডারেট বাহিনী পিছু হটে ভার্জিনিয়ায় ফিরে যায়। এই যুদ্ধটি উত্তরাঞ্চলের জন্য একটি বড় বিজয় ছিল এবং দক্ষিণাঞ্চলের মনোবল ভেঙে দেয়।

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ

গেটিসবার্গ যুদ্ধ ছিল গৃহযুদ্ধের সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, যেখানে প্রায় ৫১,০০০ সৈন্য হতাহত হয়। এই যুদ্ধের ফলে উভয় পক্ষেরই বিশাল ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং এটি যুদ্ধের দীর্ঘায়ু নির্দেশ করে।

টার্নিং পয়েন্ট

গেটিসবার্গ যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই যুদ্ধে লি'র আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ায় দক্ষিণের আক্রমণাত্মক ক্ষমতা অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে যায় এবং তারা আর কখনও উত্তরাঞ্চলে বড় আক্রমণ চালাতে পারেনি।

গেটিসবার্গ ভাষণ

১৮৬৩ সালের ১৯ নভেম্বর, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন গেটিসবার্গ যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের স্মরণে গেটিসবার্গ জাতীয় কবরস্থানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি সংক্ষিপ্ত কিন্তু গভীর ভাষণ দেন। এই ভাষণটি "গেটিসবার্গ ভাষণ" নামে পরিচিত এবং এটি আমেরিকান ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত বক্তৃতা। লিংকন বলেন, "চারটি বছর ও সাত বছর আগে আমাদের পিতারা এই মহাদেশে স্বাধীনতা ঘোষণা করে একটি নতুন জাতি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা সকল মানুষকে সমান অধিকারের ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।"

ঐতিহাসিক মূল্যায়ন

গেটিসবার্গ যুদ্ধ আমেরিকান গৃহযুদ্ধের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি যুদ্ধের ধারা পরিবর্তন করে এবং উত্তরাঞ্চলের বিজয়ের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এই যুদ্ধের ফলাফল গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির দিকে নিয়ে যায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংহতি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভিক্সবার্গ যুদ্ধ (Siege of Vicksburg) আমেরিকান গৃহযুদ্ধের একটি প্রধান সংঘর্ষ ছিল, যা ১৮৬৩ সালের ১৮ মে থেকে ৪ জুলাই পর্যন্ত মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের ভিক্সবার্গ শহরে সংঘটিত হয়েছিল। এই যুদ্ধের মাধ্যমে মিসিসিপি নদীর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ইউনিয়ন বাহিনী এবং কনফেডারেট বাহিনীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। এটি গৃহযুদ্ধের একটি প্রধান টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়।

যুদ্ধের পটভূমি

পরিস্থিতি

মিসিসিপি নদী গৃহযুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ ও যোগাযোগের রুট ছিল। ইউনিয়ন বাহিনী এই নদীর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ পেতে চেয়েছিল, যা কনফেডারেট বাহিনীর সরবরাহ লাইন কেটে দেবে এবং তাদের ভৌগোলিকভাবে বিভক্ত করবে। ভিক্সবার্গ ছিল মিসিসিপি নদীর একটি কৌশলগত শহর এবং কনফেডারেট বাহিনী এটি মজবুত করে রেখেছিল।

যুদ্ধের প্রধান ঘটনাবলী

অভিযানের শুরু

মেজর জেনারেল উলিসিস এস. গ্রান্ট (Ulysses S. Grant) নেতৃত্বে ইউনিয়ন বাহিনী ভিক্সবার্গ দখলের জন্য একটি বৃহৎ অভিযান শুরু করে। তারা বিভিন্ন দিক থেকে শহরের দিকে অগ্রসর হয় এবং কনফেডারেট বাহিনীর প্রতিরোধ ভেঙে শহরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে।

অবরোধ

১৮৬৩ সালের ১৮ মে থেকে ইউনিয়ন বাহিনী ভিক্সবার্গ শহরকে সম্পূর্ণরূপে অবরোধ করে ফেলে। এই অবরোধ চলাকালে শহরের মধ্যে খাদ্য ও অন্যান্য সরবরাহ সংকট দেখা দেয়। কনফেডারেট বাহিনী শহরকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করে, কিন্তু তারা ইউনিয়ন বাহিনীর শক্তিশালী অবরোধ ভাঙতে ব্যর্থ হয়।

আত্মসমর্পণ

৪ জুলাই ১৮৬৩, ৪৭ দিনের অবরোধের পর, কনফেডারেট বাহিনী, জেনারেল জন সি. পেম্বার্টনের (John C. Pemberton) নেতৃত্বে, আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এই আত্মসমর্পণের ফলে মিসিসিপি নদীর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ইউনিয়ন বাহিনী এবং কনফেডারেট বাহিনী পূর্ব ও পশ্চিমে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

যুদ্ধের পরিণতি ও গুরুত্ব

ইউনিয়ন বাহিনীর বিজয়

ভিক্সবার্গ যুদ্ধে ইউনিয়ন বাহিনীর বিজয় ছিল একটি প্রধান সাফল্য। এটি তাদের মিসিসিপি নদীর উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রদান করে এবং কনফেডারেট বাহিনীকে দুটি ভাগে বিভক্ত করে, যা তাদের সামরিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুতরভাবে ব্যাহত করে।

কনফেডারেট বাহিনীর দুর্বলতা

এই যুদ্ধে কনফেডারেট বাহিনীর পরাজয় তাদের মনোবল ভেঙে দেয় এবং তাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ভিক্সবার্গের পতন কনফেডারেট বাহিনীর জন্য একটি বড় আঘাত ছিল এবং এটি তাদের সামরিক কৌশলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলে।

গৃহযুদ্ধের টার্নিং পয়েন্ট

ভিক্সবার্গ যুদ্ধকে গৃহযুদ্ধের একটি প্রধান টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই যুদ্ধের ফলে দক্ষিণাঞ্চলীয় কনফেডারেট বাহিনী উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ইউনিয়ন বাহিনীর বিজয়ের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।

ঐতিহাসিক মূল্যায়ন

ভিক্সবার্গ যুদ্ধ আমেরিকান গৃহযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এটি যুদ্ধের ধারা পরিবর্তন করে এবং ইউনিয়ন বাহিনীর বিজয়ের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল। এই যুদ্ধের ফলাফল গৃহযুদ্ধের সমাপ্তি ত্বরান্বিত করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সংহতি পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

No comments:

Post a Comment

Harry Potter

 The Dark Lord Ascending T he two men appeared out of nowhere, a few yards apart in the narrow, moonlit lane. For a second they stood quite ...